কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায়

প্রিয় পাঠক হয়তোবা আপনি চুল অনেক ভালোবাসেন অথবা চুল কালো রাখতে অনেক পছন্দ করেন। আর এই জন্য হয়তোবা জানতে চাচ্ছেন কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায় সম্পর্কে।যদি তাই হয় তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। পাশাপাশি আর্টিকেলে চুল কালো করার শ্যাম্পু কোনটি সে সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা করা হয়েছে।
কলপ-ছাড়া-পাকা-চুল-কালো-করার-উপায়

আশা করি এই আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনি চুল বিষয়ক অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায়,চুল কালো করার সেম্পু,পাকা চুল কালো করার হোমিও ঔষধ,চুল পাকে কোন ভিটামিনের অভাবে,চুল পড়া বন্ধ করতে কোন ভিটামিন খেতে হবে?খুশকি চিরতরে দূর করার উপায়? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। তো চলুন শুরু করা যাক

কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায়

বর্তমান সময় দেখা যায় খুব কম বয়সে মানুষের চুল পাকতে থাকে। চুল পাকার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।যারা বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত টেনশন করে তারা অল্প বয়সে চুল পাকিয়ে ফেলে।

এছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে। অল্প বয়সে চুল পাকার একটি বিশেষ কারণ হলো আমাদের শরীরের জিন বা বংশগতির প্রভাবের কারণ।এছাড়াও আমাদের খাদ্যে ভেজাল,পরিবেশে দূষণ,পানিতে অতিরিক্ত আয়রন,অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান এসব কারণেও কম বয়সে চুল পাকা শুরু করে।

আমাদের চুলের রং মেলানিন নামক হরমোনের উপর নির্ভর করে থাকে। আর আমাদের বয়স যখন বাড়তে থাকে তখন আমাদের শরীরে এই মেলানিন উৎপাদনের ক্ষমতা কমতে থাকে যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে আমাদের চুল পেকে যায়।

আর তখন অনেকে চুলে কলপ বা ড্রাই করে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন কলপ বা ড্রাই করা ছাড়াও আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পাকা রোধ করতে পারেন।

তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায়।

১। আমলকির ব্যবহার 

একটি বাটিতে নারকেলের তেল নিন। তারপর এই নারকেলে তেলের সাথে শুকনো আমলকি বা আমলকির গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিন।তারপর এটিকে জ্বাল দিন। তারপর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। 

ঠান্ডা হয়ে গেলে তারপর এটি চুলে ব্যবহার করুন। আপনি এভাবে সারারাত রেখে দিতে পারেন।সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এটি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনি এক চামচ লেবুর রসের সাথে এক চামচ আমলকির পেস্ট মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন।

তারপরে মেসেজ করে সারা রাত রেখে দিতে পারেন। তারপরের দিন উঠে চুলে শ্যাম্পু করে নেবেন।

২। লেবুর রস এবং তার সাথে আমলকির পেস্ট

আমলকি বিশেষভাবে চুলপাকা রোধ করে। আমলকি তে রয়েছে ভিটামিন সি,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুল পাকা রোধ করার পাশাপাশি আমাদের চুলের গোড়াও মজবুত করে থাকে। প্রথমে আমলকি থেতে নিয়ে হালকা করে বেটে এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

তারপর যখন এটি চুলের গোড়াতে মাখবেন তখন চুলের গোড়াতে ঘষে ঘষে মাখার চেষ্টা করবেন। মাথায় যেসব স্থানে পাকা চুল রয়েছে চাইলে সেইসব স্থানে লাগাতে পারেন।

এই পেস্ট চুলে লাগানোর পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন। ভালো ফলাফল পেতে চাইলে এটি প্রতিদিন ব্যবহার করুন।

৩। পেঁয়াজের পেস্ট এর ব্যবহার

আপনি কি জানেন নতুন চুল গজাতে, চুল মজবুত করতে পেঁয়াজের ব্যবহার অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। চুল পাকা দূর করতে এমনকি পাকা চুল কালো করতে অনেক মানুষ পেঁয়াজের রস ব্যবহার করে থাকে। 

এক্ষেত্রে পেঁয়াজ ভালো করে বেটে পেঁয়াজের পেস্ট তৈরি করুন। পেঁয়াজের পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে এটি চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগানোর চেষ্টা করবেন। তারপরে এটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

এটি সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করলে হবে। আর যদি এটি দৈনন্দিন ব্যবহার করেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।

৪। লেবুর রস এবং এর সাথে নারকেল তেল

এক্ষেত্রে নারকেল তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে এটি চুলের গোড়ায় গোড়ায় মেসেজ করতে হবে। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলেও হবে অথবা আপনি যদি মনে করেন তাহলে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।

৫। গাজরের রসের ব্যবহার

আপনি কি জানেন গাজরের রস পান করার মাধ্যমে আপনি আপনার চুল পাকা সম্ভাবনা কমই আনতে পারবেন। তাই এজন্য খাবারের মেনুতে রাখুন গাজরের রস। প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের রস পান করার চেষ্টা করুন। চুল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমবে।

৬। চায়ের ব্যবহার

এক্ষেত্রে এক কাপ পানি নিন। তারপর সেই পানিতে দুই চামচের মত কালো চা দিয়ে ভালো করে সেটিকে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো হয়ে গেলে তা ছেঁকে নিন। তারপর সেটি ঠান্ডা হয়ে গেলে পুরো মাথায় ঘষে ঘষে লাগান।ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন।

৭। কারি পাতা এবং নারিকেল তেল

চুলকে কালো করতে কারি পাতা সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে এক চামচ নারকেল তেলের সাথে কিছু কারি পাতা নিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা অবস্থায় চুলে ভালো করে মেসেজ করুন। ঘন্টাখানেক রাখার পর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

প্রিয় বন্ধুরা উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো পড়ে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে পাকা চুল কালো করতে স্বাবলম্বী হবেন।

চুল কালো করার সেম্পু

চুল কালো করার সবথেকে শ্যাম্পু হিসেবে ভালো উপাদানটি হলো ডেক্স ব্ল্যাক হেয়ার শ্যাম্পু (Dexe Black Hair Shampoo)।চুল কালো করতে এটি খুব উপকারী একটি শ্যাম্পু।এটি ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে।

ব্যবহারের নিয়মটি হচ্ছে যেদিন আপনি চুল কালো করতে যাবেন তার আগে চুল পানি দিয়ে সম্পূর্ণরূপে সুন্দর করে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। তারপরে চুল ভালো করে শুকিয়ে নিবেন।

খেয়াল রাখবেন ডেক্স ব্ল্যাক হেয়ার শ্যাম্পু (Dexe Black Hair Shampoo) ভেজা চুলে ব্যবহার করতে হয় না। এই শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হলে চুল শুকনো থাকতে হয়। শুকনো অবস্থায় ডেক্স ব্ল্যাক হেয়ার শ্যাম্পুর একটি প্যাকেট নিবেন।

এক্ষেত্রে হাতে অবশ্যই কাপড় পেঁচিয়ে নিবেন অথবা হাতে এমন কিছু পরিধান করবেন যেন শ্যাম্পুটি আপনার হাতের ত্বকে না লাগে,কারণ যদি এটি হাতের ত্বকে লাগে তাহলে তা কালো হয়ে যাবে।শ্যাম্পুর প্যাকেট থেকে শ্যাম্পু বের করে যেখানে যেখানে সাদা চুল আছে সেসব জায়গায় ভালো করে লাগিয়ে নিবেন।

লাগিয়ে নেওয়ার পর যদিও এ শ্যাম্পুর ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে ৫ মিনিট রাখলে হবে কিন্তু আমি বলব ৫ মিনিট না আপনি ১৫ মিনিট রাখবেন। ১৫ মিনিট রাখলেই যথেষ্ট। ১৫ মিনিট রাখার পর যেভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করার সময় চুল ওয়াশ করেন ঠিক সেই ভাবে শ্যাম্পুর মত করে আপনি আপনার চুল ওয়াশ করে নেবেন। 

ওয়াশ করার পর দেখবেন আপনার চুলটি একদম ন্যাচারাল কালার হয়ে গেছে। পাকা চুলগুলো কালো হয়ে গেছে। দেখলে বোঝা যাবে না যে আপনি চুলে হেয়ার কালার ব্যবহার করেছেন। 

আর এই শ্যাম্পুর ক্ষেত্রে একটি সুবিধার দিক রয়েছে সেটি হল অনেক ক্ষেত্রে চুল কলপ বা বিভিন্ন কালার করার সময় দেখা যায় মাথার ত্বকে বিভিন্ন স্থানে কালো কালো হয়ে আছে, কিন্তু ডেক্স ব্ল্যাক হেয়ার শ্যাম্পু ব্যবহার করলে এই সকল সমস্যা দেখা যায় না।

পাকা চুল কালো করার হোমিও ঔষধ

লাইকোপোডিয়াম,সালফার,সোরাইনাম,ক্যালকেরিয়া কার্ব,সেলিনিয়াম,ফসফরাস এ সকল ওষুধ হোমিওপ্যাথির মধ্যে পড়ে। তবে কার জন্য কোন ওষুধ ভালো সেটা একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ডাক্তার নির্ধারণ করতে পারবে।

তারপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মধ্যে দুটি হোমিও ওষুধ এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। সেই দুটি হোমিও ঔষধ হলো - Acid phos 200 এবং Lycopodium 200 এর মিশ্রণ। এই দুইটি হোমিও ওষুধের মিশ্রণ প্রতিদিন এক ফোঁটার মতো সেবন করা হয় পাকা চুল কালো করার ক্ষেত্রে। 

তবে আমি বলব পাকা চুল কালো করার হোমিও ওষুধের ক্ষেত্রে আপনি একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করাটা সব থেকে শ্রেয়।

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

চুল পাকে কোন ভিটামিনের অভাবে

বিভিন্ন কারণে চুল পাকতে পারে। তবে কিছু ভিটামিনের অভাবেও আমাদের চুল পাকতে থাকে বলে মনে করেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ। এর মধ্যে প্রধান ভিটামিন গুলো হলোঃ

ভিটামিন সি

বন্ধুরা ভিটামিন সি আমাদের শরীরে কোলাজেন সৃষ্টি করে এবং এটি আমাদের চুলকে ধূসর হতে বাধা দিয়ে থাকে। ভিটামিন সি'র অভাবে চুল পাকতে পারে।

ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২

চুল বৃদ্ধির জন্য এই সকল ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ। এ সকল ভিটামিনের অনুপস্থিতির কারণে চুল পড়ে যেতে পারে পাশাপাশি চুল পাকতে শুরু করে।

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি এর অনুপস্থিতির কারণে চুল সাদা হতে পারে পাশাপাশি চুলের ক্ষতি হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়-ছেলেদের মধু ঘর উপকারিতা

চুল পড়া বন্ধ করতে কোন ভিটামিন খেতে হবে?

বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে যেগুলো চুল পড়া বন্ধ করতে খুবই উপকারী। তো চলুন জেনে নেই সে ভিটামিন গুলো সম্পর্কে।

ভিটামিন এ

আম,মিষ্টি আলু,গাজর, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। খাদ্যে এগুলো গ্রহণ করলে আশা করি চুল পড়া বন্ধ হবে।

ভিটামিন বি

মাংস,ডিম,পেঁপে এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন বি যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপযোগী।

ভিটামিন সি

পেয়ারা,লেবু,আমলকি,কমলা ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন সি যা চুলার জন্য ভালো।

বায়োটিন (ভিটামিন বি ৭)

চুলের ফলি কল গুলিকে শক্তিশালী করতে বায়োটিন কাজ করে থাকে।পাশাপাশি ঘনত্ব বৃদ্ধি করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ টমেটো দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়-ত্বকের যত্নে টমেটোর ব্যবহার

খুশকি চিরতরে দূর করার উপায়?

খুশকি দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। আশা করি সে উপায় গুলো ব্যবহার করে আপনি চুল হতে খুশকি দূর করতে সক্ষম হবেন।

১। ভিনেগার এর ব্যবহার

যতটুকু পানি নিবেন ঠিক সমপরিমাণ ভিনেগার একত্রে একটি পাত্রে অথবা গ্লাসে মিশিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মত মাথায় লাগিয়ে রাখুন। তারপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর মাতা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করে নিন।

২। বেকিং সোডা এর ব্যবহার

গোসলের সময় যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তখন সে শ্যামপুর সাথে কিছু পরিমাণ বেকিং সোডা একত্রে মিশিয়ে চুলে ওয়াশ করুন।

৩। নিম এর ব্যবহার

নিমের পাতা বা তেল মাথার ত্বকে মালিশ করুন নিয়মিত।

৪। টি ট্রি ওয়েল

খুশকি দূর করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

৫। টক দই এর ব্যবহার

খুশকি দূর করতে টক দই মাথার ত্বকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।

এই উপাদান গুলো আপনি বাড়িতে বসে ব্যবহার করতে পারবেন এবং এগুলো খুশকি দূর করার জন্য কার্যকরী পদ্ধতি।

লেখকের মন্তব্য

বন্ধুরা আশা করি ইতিমধ্যে আপনারা কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায়,চুল কালো করার সেম্পু,পাকা চুল কালো করার হোমিও ঔষধ,চুল পাকে কোন ভিটামিনের অভাবে,চুল পড়া বন্ধ করতে কোন ভিটামিন খেতে হবে?খুশকি চিরতরে দূর করার উপায়? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

আরো সব তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আজ এ পর্যন্তই এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url