বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ সমূহ - বিবাহের শর্ত কয়টি

প্রিয় পাঠক আজকে এই আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ সমূহ এবং বিবাহের শর্ত কয়টি এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। হতে পারে আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনি আর্টিকেলটি পড়ে পেয়ে যাবেন।
বিবাহ-বিচ্ছেদের-কারণ-সমূহ

আপনি যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনি বিবাহ বিচ্ছেদের অনেক কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন যেগুলো জানার মাধ্যমে আপনি আপনার বিবাহিত জীবনটি বিচ্ছেদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন।

ভূমিকা

এই আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনি বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ সমূহ,বিবাহের শর্ত কয়টি,ডিভোর্স দিতে কি সাক্ষী লাগে?ডিভোর্স দিতে কত সময় লাগে?ডিভোর্সের কতদিন পর মেয়েরা বিয়ে করতে পারে?ডিভোর্স দিলে কি কাবিনের টাকা দিয়ে দিতে হয়? এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ সমূহ

আমাদের সমাজে বিয়ে খুব চমৎকার একটি জিনিস হিসেবে পরিচিত। এটি যেমন চমৎকার একটি বিষয় ঠিক তেমনি সিরিয়াস একটি বিষয় যা হেসে-খেলে কাটিয়ে দেওয়ার মত নয়।

বিয়ের সঙ্গে জড়িত আছে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য,সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষা ইত্যাদি সহ বেশ কিছু বিষয়। কিন্তু খেয়াল করে দেখেন বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি দেখা যায়। বিবাহ বিচ্ছেদ আর এমনি এমনি হয়ে থাকে না এটির পিছনে কোন না কোন কারণ থাকেই। 

আর সেই কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করব এই আর্টিকেলে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই উল্লেখযোগ্য কারণগুলো যার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে।

১। সঙ্গতিপূর্ণ না থাকা অর্থাৎ অসঙ্গতি

অসঙ্গতি বিবাহ বিচ্ছেদের একটি কারণ। দুজনের মধ্যে মিল না থাকা,মিলের থেকে অমিল বেশি থাকা। একে অপরের কথা এবং কাজের মধ্যে বহু পার্থক্য থাকা, দুজনের আলাদা আলাদা মূল্যবোধ, তারপর যৌন জীবনের সমস্যা ইত্যাদি কারণ সমূহের জন্য বিচ্ছেদ হতে পারে।

২। ভুল বুঝাবুঝি

খেয়াল করে দেখেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মারামারি,তর্ক এবং বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই ভুল বুঝাবুঝি। কোন একটা জিনিসের জন্য অতিরিক্ত সন্দেহ করা, ভুল বুঝা,আর্থিক বিষয়গুলো সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা না করা এগুলো বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয়ে থাকে। তাই একে অপরকে কখনো ভুল না বুঝে প্রত্যেকটি বিবাহিত মানুষদের উচিত খোলাখুলি কথা বলা, একে অপরকে সত্য কথা বল।

৩। বিশ্বাস ভঙ্গ করা অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতা

বিশ্বাসঘাতকতা কে কোন ব্যক্তি পছন্দ করে না। যে ব্যক্তি বিশ্বাস ভঙ্গ করে সে ব্যক্তির কাছে অন্য ব্যক্তি কখনো বিশ্বাস রাখতে পারে না। আর এ বিশ্বাস ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে ভালোবাসার মধ্যে বিশ্বাস এক অন্যতম জিনিস।

ঠিক তার থেকেও বিশ্বাস জিনিসটা আরো মূল্যবান হলো দাম্পত্য জীবনে। বিবাহিত মানুষদের সংসারের মধ্যে যদি একে অপরের প্রতি বিশ্বাসই না থাকে তাহলে সে সমস্যা টিকে না।প্রতারণা,মিথ্যে,লুকোচুরি, বিশ্বাসঘাতকতা এগুলো একটি সম্পর্ক ভাঙার লক্ষণ। তাই পরস্পরের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা করবেন।

৪। মাদক দ্রব্যে আসক্তি

বিভিন্ন ধরনের নেশার প্রতি আসক্তি একটি বিবাহিত জীবনে এনে দিতে পারে বিচ্ছেদ। মদ,ফেনসিডিল,ইয়াবা, গাঁজা সহ আরো যেসব মাদকদ্রব্য রয়েছে সেগুলোতে আসক্তি ব্যক্তিরা সংসার জীবনকে নষ্ট করে তুলে। 

তার সাথে সাথে নিজের মেজাজের পরিবর্তন হয় ঘুমের ধরন পাল্টে যায় পারিবারিক দায়িত্ব হ্রাস পায় জীবন সিস্টেম টাকেই পাল্টে দেয়। মাদকদ্রব্য আসক্তি ব্যক্তিরা যৌন জীবনের সমস্যায় ভোগে। মাদকদ্রব্য আসক্তি ব্যক্তি স্ত্রীকে পরিপূর্ণ সুখ দিতে পারে না। অর্থের অপচয় করে থাকে। এ সমস্ত কারণের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে।

৫। অন্য নর-নারীতে আসক্তি

কোন স্ত্রীর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে রেখে অন্য মেয়ের প্রেমে পড়ে অথবা অন্য মেয়ের প্রতি আসক্তি হয়ে পড়ে তাহলে সেটি কোন স্ত্রী মেনে নেবে না এবং এর ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। 

ঠিক তেমন কোন স্ত্রী যদি পর পুরুষের আসক্তিতে পড়ে বা পর পুরুষের প্রেমে পড়ে তাহলে এটি তার স্বামী কখনো মেনে নিবে না যার ফলে একসময় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

৬। পরক্রিয়া

বর্তমানে ডিভোর্স অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হচ্ছে এই পরক্রিয়া। পরক্রিয়ার হাড় সংখ্যায় বেড়ে গেছে যার ফলে বেশিরভাগ বিবাহ জীবন ডিভোর্সে পরিণত হচ্ছে। এই পরক্রিয়ার ফলে বিবাহ জীবনের শেষ ঠিকানা বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হচ্ছে।

৭। নির্যাতন

একটি নারী যেমন নির্যাতনের শিকার হয় ঠিক একইভাবে পুরুষও নির্যাতনের শিকার হতে পারে। আপনার বিবাহিত জীবনের সঙ্গীকে আপনি যদি প্রতিদিন কোন না কোন কারনের জন্য নির্যাতন করে থাকেন তাহলে নির্যাতনই আপনার বিবাহ জীবনটাকে একদিন বিচ্ছেদে রূপান্তরিত করতে পারে। তাই বিবাহিত জীবনে স্বামী এবং স্ত্রীর প্রত্যেকরে উচিত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন না করা।

৮। স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ

নারী এবং পুরুষ সবারই সমান অধিকার রয়েছে। আপনি যদি আপনার বিবাহিত স্ত্রী অথবা বিবাহিত স্বামী কে সবসময় বন্দী জীবনের রাখেন তাহলে সে একসময় বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে। তাই সকলেরই উচিত কিছুটা হলেও স্বাধীনতা দেওয়া।

৯। অতিরিক্ত সন্দেহ

সন্দেহ ভালোবাসা লক্ষণ। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না। অতিরিক্ত সন্দেহের কারণে অনেক বিবাহ শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে পরিণত হয়। কারণে অতিরিক্ত সন্দেহের কারণে একটি সংসারে তর্ক,বিতর্ক,ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।আর এই তর্ক,বিতর্ক,ঝগড়া একটি সংসারে বারবার চলতে থাকলে সে সংসার আর টিকে না এবং এক পর্যায়ে বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১০। অর্থনৈতিক কারণ

অনেক সময় দেখা যায় স্বামী বেকার অথবা স্বামীর আয় খুব সীমিত অপরদিক স্ত্রীর বিলাসবহুল জীবনযাপন। এ কারণেও একটি  বিচ্ছেদ হয়ে থাকে।

বন্ধুরা উপরোক্ত এই দশটি কারণ হলো বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের উল্লেখযোগ্য কারণ। এছাড়াও একটি বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক কারণও থাকতে পারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণও হতে পারে।

আরো পড়ুনঃভালবাসার আবেগি স্ট্যাটাস-আবেগি ফেসবুক স্ট্যাটাস

বিবাহের শর্ত কয়টি

বিবাহের শর্ত চারটি।নিম্নে বিবাহের শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১। বর এবং কনে উভয়ের প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হতে হবে। যেমন বর ও কনে পরস্পরের মাহরাম না হওয়া।


২। বর এবং কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্য পন্থায় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেমন ইশারা করে দেখিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বা নাম, বংশ পরিচয়, ঠিকানা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা।

৩। স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে। স্বামী স্ত্রী কাউকে জোর করে বিয়ে দেওয়া যাবে না, এটি জায়েজ নয়। কুমারী এবং অকুমারী উভয় পক্ষের অনুমতি নিয়ে বিয়ে পড়াতে হবে।

৪। বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। সাক্ষী হিসেবে দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ এবং দুইজন মহিলা থাকতে হবে। যারা প্রস্তাবনা এবং কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পাই।

ডিভোর্স দিতে কত সময় লাগে?

বিবাহ বিচ্ছেদ নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী স্ত্রী যদি নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া না করে তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ সেক্সের রসুনের উপকারিতা কি-কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ডিভোর্সের কতদিন পর মেয়েরা বিয়ে করতে পারে?

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ডিভোর্স প্রদানের পর মেয়েদের জন্য পুনরায় বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটি ইদ্দতকালীন সময় মেনে চলতে হবে। এই ইদ্দত কাল হলো তিন মাসের একটি সময় কাল যা ডিভোর্স দেওয়ার পর থেকে গণনা করা হয়। এই সময়কার শেষ হওয়ার পরে মেয়েরা আবার বিয়ে করতে পারবে।

ডিভোর্স দিলে কি কাবিনের টাকা দিয়ে দিতে হয়?

হ্যাঁ। ডিভোর্স দিলে কাবিনের টাকাটা দিয়ে দিতে হয়।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি ইতিমধ্যে আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ সমূহ,বিবাহের শর্ত কয়টি,ডিভোর্স দিতে কি সাক্ষী লাগে?ডিভোর্স দিতে কত সময় লাগে?ডিভোর্সের কতদিন পর মেয়েরা বিয়ে করতে পারে?ডিভোর্স দিলে কি কাবিনের টাকা দিয়ে দিতে হয়?এই সকল বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করেছেন।

বর্তমান সময়টাতে ডিভোর্সের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ভেঙে যাচ্ছে অনেক সংসার। বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিবাহ জীবনে ঘটছে বিচ্ছেদ। আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে কোন সব কারণে একটি বিবাহিত জীবনে বিচ্ছেদ ঘটে। 

তাই আপনি যদি আপনার বিবাহিত জীবনটি টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে সে সকল কাজ থেকে বিরত থাকুন। সব থেকে বড় ব্যাপার হলো বিশ্বাস। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখুন, ভালোবাসা রাখুন।আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন,দোয়া করি আপনার বিবাহিত জীবন সুখের হোক আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url